বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ রাস্তা ঘাট !! চলাচলের পথে নৌকা ব্যবহার হচ্ছে !! - SaraBela Online

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Tuesday, July 25, 2017

বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ রাস্তা ঘাট !! চলাচলের পথে নৌকা ব্যবহার হচ্ছে !!

বৃষ্টির পানিতে ফের চট্টগ্রাম নগরের নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। শনিবার রাত থেকে গতকাল আজ সোমবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, আছাদগঞ্জসহ হালিশহর, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও ও বাকলিয়া এলাকা। দোকান ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। এ ছাড়া যানবাহন সংকটে কর্মস্থলে যাওয়া মানুষকে পড়তে হয়েছে চরম বিপাকে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ ফরিদ আহমেদ বলেন, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজ সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৮৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টিতে নগরীর চকবাজার, বাদুরতলা, আরাকান হাউজিং, বাকলিয়া, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট, হালিশহর, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিকসহ নিচু এলাকাগুলো হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়।

বকশির হাট ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জামাল হোসাইন বলেন, চাক্তাইখালের পূর্ব পাশের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। অনেক বাসাবাড়িতেই এখন হাঁটু থেকে গলা পর্যন্ত পানি জমে গেছে।
এ দিকে জোয়ার ও বৃষ্টির পানির নিচে ছিল চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ৮০ শতাংশ ভোগ্য পণ্যের দোকান ও গুদাম পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিকট অতীতে এই পরিমাণ পানি আর কখনো হয়নি। এমনিতে প্রতিদিন দু’বার জোয়ারের পানিতে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি পোহাতে হতো। সেটি থেকে পরিত্রাণ পেতে ব্যবসায়ীরা দোকান ও গুদামের প্রবেশমুখগুলো দুই ফুট পর্যন্ত প্রাচীর তুলে দিয়েছেন। কিন্তু গতকাল এই প্রাচীর উপচেও পানি ঢুকে পড়ায় শতকোটি টাকার তির সম্মুখিন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চালপট্টিতে। প্রায় প্রতিটি চালের আড়তে পানি প্রবেশ করায় আড়তদাররা হতাশা প্রকাশ করেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাক্তাই খালের তলা পাকা করে দিয়ে খালটিকে একটি বড় নালায় পরিণত করা হয়েছে। এছাড়া রাজাখালী খাল ও সংলগ্ন শাখা খালগুলোর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। এইসব খালের পানি ধারণ মতা কমে যাওয়ায় সহজে জোয়ারের পানি দোকান ও গুদামগুলোতে প্রবেশ করছে। এছাড়া কর্ণফুলী খাল ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো ও চাক্তাই খালের পাকা তলা ভেঙে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রয়োজনে সিএস জরিপ মতে খালের পূর্বের গভীরতা নিরূপন করে খালের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন তারা।
আজ সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, জোয়ারের পানিতে মধ্যম চাক্তাই, নতুন চাক্তাই, চর চাক্তাই, পুরনো চাক্তাই, মকবুল সওদাগর রোড ও আসাদগঞ্জের রাস্তা ডুবে যায়। এছাড়া খাতুনগঞ্জ এলাকার চানমিয়া গলি, ইলিয়াছ মার্কেট, বাদশা মার্কেট, সোনা মিয়া মার্কেট, আমির মার্কেট, নবী মার্কেট, চাক্তাই মসজিদ গলি, ড্রামপট্টি, চালপট্টি ও এজাজ মার্কেটসহ বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের দোকান ও গুদামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে প্রচুর পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। অনেকে পাম্প এনে দোকান ও গুদামের পানি নিষ্কাশন করেছেন।
চাক্তাইয়ের চালপট্টির আড়তদার এম সরোয়ার বলেন, এমনিতে জোয়ারের পানিতে দিনে দু’বার তলিয়ে যায় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। গতকাল জোয়ারের পানি ও বৃষ্টিতে বিভিন্ন গুদামের পেঁয়াজ, রসুন, মসলা, মরিচ, চাল, শুটকিসহ নানা ধরনের ভোগ্যপণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমরা দোকান ও গুদামের তলা উঁচু করেছি। প্রবেশমুখগুলো প্রায় ২ ফুট পর্যন্ত দেয়াল তুলেছি। তারপরেও আজকের (গতকাল) পানি সাম্প্রতিককালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আমি বিগত ২৫ বছর এই পরিমাণ পানি দেখিনি। সরকারের কাছে দাবি, চাক্তাই খাল ও রাজাখালী খালের কর্ণফুলী নদীর মোহনায় স্লুুইচ গেট নির্মাণ করতে হবে। না হলে ব্যবসায়ীদের জন্য আরো খারাপ সময় অপেক্ষা করছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে আজকে (গতকাল) সর্বোচ্চ পানি উঠেছে। প্রায় ৮০ শতাংশ দোকান ও গুদামে পানি প্রবেশ করেছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের জলাবদ্ধতা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। আমরা বারবার বলেছি কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না নিয়ে চাক্তাই খালের তলা পাকা করে খালটিকে একটি বড় নালায় পরিণত করা হয়েছে। ওইখানে আবার পলি জমছে। খালের দুই পাশে অবৈধ দখলদারতো রয়েছেই। চাক্তাই-রাজখালী খালসহ অন্যান্য শাখা খালগুলোর পানি ধারণ মতা কমে যাওয়ার কারণে সহজেই জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছগির আহমদ বলেন, আসাদগঞ্জ, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জের অনেক গুদাম, আড়ত ও দোকানে পানি ঢুকে পণসামগ্রী নষ্ট হয়েছে। প্রায় ছয় হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানিতে ডুবেছে। জনপ্রতিনিধিরা শুধু ভোটের সময় আসেন, আমাদের দুর্ভোগের সময় দেখতেও আসেন না।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সিটি কর্পোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ, গ্যাস কর্তৃপক্ষ , সিডিএ, বন্দর, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো নিয়ে একটি কো-অর্ডিনেশন সেল গঠন করতে হবে। জলাবদ্ধতার দায় শুধু নির্দিষ্ট একটি সংস্থার নয়। সবার সমন্বিত উদ্যোগে জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন করতে হবে। চাক্তাই খালের তলা পাকা করে দেয়া নি:সন্দেহে একটি ভুল ছিলো। একই সাথে যেকোন মূল্যে অন্যান্য শাখা খালগুলোর দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পানির ধারণ মতা বাড়াতে হবে। এছাড়া কর্ণফুলী দিন দিন নাব্যতা হারাচ্ছে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সেই নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
এদিকে গত ৫ এপ্রিল চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের জলাবদ্ধতা নিরসনে সাত দফা দাবি তুলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিলো, জরুরি ভিত্তিতে চাক্তাই খাল পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খাল খনন শুরু ও খালে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা এবং বন্দরকে বাঁচাতে কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পরিকল্পিত ড্রেজিং শুরু ও নদীর তীরে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ। এছাড়া জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধে নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শে পরিকল্পনা গ্রহণ, বন্দর থেকে নদীপথে পরিবহন ব্যবস্থা চালু, বন্দরের পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রতা নিরসন, কর্ণফুলী নদীর তীরে চাক্তাই এলাকায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ ও বন্দর থেকে সড়কপথে পণ্য পরিবহনে জটিলতা নিরসন।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত তিন বছর ধরে দফায় দফায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে বড় ধরনের আর্থিক তির মুখে পড়েছেন তারা। বর্তমানে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ছোট-বড় মিলে সাত হাজারেরও বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারে প্রচুর দোকান ও গুদাম পানিতে তলিয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে মালামাল সরিয়ে নেয়াও সম্ভব হয় না। জোয়ারের পানি থেকে মুক্তি পেতে তারা চাক্তাই-রাজাখালী খালের মোহনায় ুইচ গেট নির্মাণ ও শাখা খালগুলো গভীরভাবে খননের দাবি করেন।

এ ব্যাপারে চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এসএম হরুনুর রশিদ বলেন, ১৯৬০ সাল থেকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যবসা করছি। একসময় আমরা নৌপথে বাণিজ্য করতাম। মানবসৃষ্ট সমস্যার কারণে আমরা সেই ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছি। খাল দখল করে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়িক পরিবেশ ধ্বংস করা হয়েছে। আজকের জোয়ারের পানি প্রায় প্রতিটি পণ্যের গুদামে ঢুকেছে, সেটি খাল দখলের কারণে হয়েছে। আমরা এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই। প্রতিটি চালের গুদামে যে পরিমাণ পানি ঢুকেছে তাতে সব চালের বস্তা সরানোও সম্ভব নয়। পুরো চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের এই তির পরিমাণ শতকোটি টাকা হবে বলে তিনি দাবি করেন।
মোহরা এলাকার বাসিন্দা আলম দিদার বলেন, ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের এলাকায় পানি উঠেনি। কিন্তু রোববার রাস্তা-ঘাট ছাড়িয়ে বাড়ি-ঘরে পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। অনেকেই দুপুরের রান্না করতে পারেননি।
এদিকে, অভিযোগ রয়েছে, নগরীর খাল নর্দমাগুলো প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করা হয় না। লোক দেখানো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কারণে জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী মুক্তি পাচ্ছে না। নগরীর প্রায় খালগুলোতে আবর্জনা দিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। এইসব খালগুলো ভালো করে খনন করার তেমন উদ্যোগ নেই। বরং কিছু কিছু খাল থেকে আবর্জনা তুলে খালের পাড়ে রাখা হয়। ফলে বৃষ্টি হলে সেই আবর্জনাগুলো ফের খালে গিয়ে পড়ছে।
এদিকে, কালুরঘাট-আগ্রাবাদ সড়কে ফ্লাইওভারের কাজ চলায় এবং ওয়াসার মেরামত কাজের জন্য রাস্তা কাটা থাকায় আরাকান সড়কের বিভিন্ন স্থানেও পানি জমে গেছে। রাস্তায় যানজট ও জলজট থাকায় যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় চলমান অতি বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। সবাইকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হতে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। এ ছাড়া অব্যাহত অতি বৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ঢলে বন্যা ও নদী ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করতে বলা হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Responsive Ads Here